জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বড় গ্রাহক অ্যাননটেক্স গ্রুপ। জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রুপটির নেওয়া প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণের পুরোটাই এখন খেলাপি। এ জন্য ব্যাংকটি পড়েছে বিপদে। এ অবস্থায় এই ঋণের দায়দায়িত্ব নির্ধারণে গ্রুপটির ঋণের ওপর পরিপূর্ণ নিরীক্ষা (ফাংশনাল অডিট) করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আড়াই বছরেও নিরীক্ষা শেষ করতে পারেনি জনতা ব্যাংক।
এখন গ্রুপটির ২২ প্রতিষ্ঠানের কোনোটির যাতে মালিকানা ও শেয়ারের পরিবর্তন না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ২২ প্রতিষ্ঠানের ঋণে ইউনুছ বাদলের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি নেওয়াসহ জনতা ব্যাংককে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ বলেন, ‘বর্তমানে অ্যাননটেক্স গ্রুপের একাধিক কারখানা চালু আছে। মালিকও দেশে রয়েছেন। ব্যবসাও চালিয়ে নিতে চান। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে কারও কোনো লাভ হবে না। এ জন্য আমরা সব ঋণ নিয়মিত করার চেষ্টা করছি। অ্যাননটেক্স গ্রুপ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৮৭ কোটি টাকা জমা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ওই টাকা যদি পাওয়া যায়, তাহলেই ঋণ নিয়মিত হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, কারখানা বন্ধ রেখে কোনো লাভ নেই। বরং চালু রাখা হলে একসময় ঋণ ফেরত আসবে। আমরা সেই পথে আছি। আর এই গ্রুপের ঋণ ঠিক হলে আমাদের ব্যাংকের সব সূচকও ঠিক হয়ে যাবে।’
জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্রে দেখা যায়, গ্রুপটির ২২ প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন সময়ে কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হলেও টাকা পরিশোধ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ব্যাংক নিজেই বাধ্য হয়ে বিদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অর্থ শোধ করে দিয়েছে। পরে গ্রাহক তা পরিশোধ করেনি। এভাবে নেওয়া ঋণসুবিধার (নন-ফান্ডেড) সব অর্থই সরাসরি ঋণে (ফান্ডেড) পরিণত হয়েছে। আবার দৈনন্দিন ব্যবসা পরিচালনার জন্য নেওয়া চলতি মূলধন (সিসি ঋণ) ঋণও ফেরত দেয়নি। এভাবে গত মার্চ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। তবে এর বিপরীতে যে জামানত আছে, তার মূল্য ২ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। ফলে জামানত ঘাটতি রয়েছে ৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার। আবার এসব ঋণের বিপরীতে অর্থ পাচারও হয়েছে।
জনতার এমডির কাছে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে গ্রুপটির ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফাংশনাল অডিট সম্পাদনের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে আড়াই বছরেও তা সম্পন্ন হয়নি—এ জন্য ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে আরও বলা হয়, গ্রুপটির ২২ প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান শেয়ার কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। সব ঋণের বিপরীতে গ্রুপটির কর্ণধার ইউনুছ বাদলের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু বড় অঙ্কের জামানত ঘাটতি রয়েছে। তাই ২২ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক পরিচালকের কাছ থেকে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি ও অগ্রিম তারিখযুক্ত চেক গ্রহণ করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post