আমদানিকৃত পণ্যের কাস্টমস নথি ও আমদানি ফরম বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না দেয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ানের ঋণপত্র (এলসি) খোলা। প্রতিষ্ঠানটির আমদানির সঙ্গে জড়িত সিটিব্যাংক এনএর মাধ্যমে ঋণপত্র খোলার প্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে স্থগিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে সিটিব্যাংক এনএর কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বৈদেশিক লেনদেন তাত্ক্ষণিক তদারকিতে যে ড্যাশবোর্ড চালু রয়েছে, তাতে আমদানির তথ্য নিয়মিত ভিত্তিতে দাখিল করতে হয়। নইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সেবা প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। ইয়াংওয়ানের আমদানির তথ্য নিয়মিত ভিত্তিতে দাখিল না করায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঋণপত্র খোলা বন্ধ হয়ে গেছে। নথিপত্র জমা দিলেই পুনরায় ঋণপত্র খোলার প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, সিটিব্যাংক এনএ ও ইয়াংওয়ান সূত্রে জানা গেছে, সিটিব্যাংক এনএর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি-সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। এর কিছু অংশ সম্পন্ন হয় ঋণপত্রের মাধ্যমে। সম্প্রতি আমদানির ফরম ও কাস্টমস নথি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়নি সিটিব্যাংক এনএ। এ কারণেই বন্ধ হয়ে গেছে ঋণপত্র খোলা।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) তালিকাভুক্ত হওয়ায় ইয়াংওয়ান বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন দাখিল করেনি। ইপিজেডে সব নথি দাখিল করা হয়েছে।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ড্যাশবোর্ডে আমদানির সব তথ্য দাখিল না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঋণপত্র খোলা বন্ধ হয়ে যাবে। ইয়াংওয়ানের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে।
এ অবস্থায় গতকাল সিটিব্যাংক এনএর কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আহসান উল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। সভায় তাদের জানিয়ে দেয়া হয়, চাহিদানুযায়ী আমদানি নথি দাখিল হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঋণপত্র খোলা চালু হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে আহসান উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ঋণপত্র খোলা বন্ধ করা হয়নি। আমদানি তথ্য দাখিল না করায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তথ্য দাখিল করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চালুও
হয়ে যাবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সব ধরনের বৈদেশিক লেনদেন তাত্ক্ষণিকভাবে তদারকির জন্য ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইলেকট্রনিক ড্যাশবোর্ড চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি-রফতানি ও রেমিট্যান্সসহ বৈদেশিক মুদ্রার যাবতীয় লেনদেনের তথ্য জানতে পারে। এ ড্যাশবোর্ডে অনলাইন ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট মনিটরিং সিস্টেম, এডি ব্রাঞ্চ, রফতানিকারক, পণ্য, দেশ এবং মুদ্রাভিত্তিক রফতানির পরিমাণ, রফতানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ, বকেয়া রফতানি বিলসহ প্রয়োজনীয় আরো তথ্য সন্নিবেশিত থাকায় নির্দিষ্ট সময়েই রফতানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। অনলাইন ইমপোর্ট মনিটরিং সিস্টেমের দুটি অংশ রয়েছে। ক্রস বর্ডার ইমপোর্ট রিপোর্টিং এবং ইনল্যান্ড ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি রিপোর্টিং। ক্রস বর্ডার ইমপোর্ট রিপোর্টিং অংশে এডি ব্রাঞ্চ, আমদানিকারক, পণ্য, দেশ এবং মুদ্রাভিত্তিক আমদানির পরিমাণ, বকেয়া আমদানি বিলের পরিমাণ, ওভারডিউ বিল ও বিল অব এন্ট্রি সম্পর্কে তথ্য থাকে। অন্যদিকে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসিতে প্রতিটি এলসি, অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয় ও বিল পরিশোধ সম্পর্কিত তথ্য থাকে। এসব তথ্য আমদানির মাধ্যমে অর্থ পাচার শনাক্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহায়তা করছে।
Discussion about this post