কত খরচ, বাঁচবে কত
বিকাশ ও রকেটের গ্রাহকদের এজেন্ট থেকে এক হাজার টাকা তুলতে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়। হিসাব থেকে এ টাকা কেটে নেওয়া হয়। তবে অনেক গ্রাহক আলাদাভাবেও ২০ টাকা পরিশোধ করেন। আবার অনেক এজেন্ট দেড় টাকা ফেরত দেন না বা দিতে চান না। তাই প্রতি হাজারে দেড় টাকা বাড়তি খরচ হয়। তবে বেশি টাকা উত্তোলনে বাড়তি খরচ কম হয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ গ্রাহকেরা যদি এটিএম থেকে মুঠোফোনে টাকা তোলেন, তাহলে প্রতি হাজারে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা খরচ হচ্ছে। বিকাশ গ্রাহকেরা ৮ ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে পারছেন।
ডাচ্বাংলা ব্যাংকের রকেটের গ্রাহকদের এটিএম থেকে টাকা তুলতে প্রতি হাজারে লাগে ৯ টাকা। অর্থাৎ খরচ পুরো অর্ধেক। ডাচ্বাংলা ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে একই খরচে টাকা তোলা যায়।
ওয়ান ব্যাংকের ওকে গ্রাহকেরা ব্যাংকটির এটিএম ও শাখা থেকে টাকা তুললে প্রতি হাজারে খরচ হয় ১০ টাকা। আর এজেন্ট থেকে টাকা তুললে খরচ হয় ১৮ টাকা।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘উপায়’–এর গ্রাহকেরা ব্যাংকটির এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারছেন। তাঁদের এজেন্ট থেকে টাকা তুলতে প্রতি হাজারে যেখানে খরচ হয় ১৪ টাকা, সেখানে এটিএমে নেয় ৮ টাকা।
বর্তমানে বিকাশের গ্রাহকের জন্য আছে ৮টি ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তোলার সুযোগ। রকেট, ওকে ও উপায়ের একটি করে।
যেভাবে টাকা তুলবেন এটিএম থেকে
এটিএম থেকে টাকা তুলতে বিকাশ, রকেট, ওকে ও উপায় গ্রাহকদের কোনো এটিএম কার্ডের প্রয়োজন নেই। এ জন্য আলাদাভাবে নিবন্ধনও করতে হচ্ছে না। কেবল প্রতিটি লেনদেনের সময় আপনার নির্ধারিত মোবাইল ফোনটি সঙ্গে নিতে হবে। কারণ, টাকা তোলার আগে গ্রাহকের পরিচিতি নিশ্চিত হতে ওই মুঠোফোনে একবার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ড আসবে। সেটি ব্যবহার করেই এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা যাবে।
বিকাশ এই সেবা শুরু করেছিল ব্র্যাক ব্যাংকের ৩৫০টি এটিএম বুথ দিয়ে। এখন ৮ ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ৩০০ এটিএম বুথ থেকে বিকাশের টাকা তোলা যায়। বিকাশের অ্যাপে কাছের এটিএমগুলোর খোঁজ মেলে।
রকেটের গ্রাহকেরা শুধু ডাচ্বাংলা ব্যাংকের সব শাখা ও এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারছেন। তবে সারা দেশে এই একটি ব্যাংকেরই ৪ হাজার ৭৭১টি এটিএম বুথ আর ২১০টি শাখা রয়েছে। একইভাবে নবাগত সেবা উপায়ের গ্রাহকদের জন্য রয়েছে ইউসিবির ৫৬৩টি এটিএম বুথ। ওয়ান ব্যাংকের ওকে গ্রাহকেরা ব্যাংকটির সব এটিএম ও শাখা থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
কার লেনদেন কত
সব মিলিয়ে দেশজুড়ে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ১০ কোটির বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এতে দিনপ্রতি গড় লেনদেন দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
মোট গ্রাহকের অর্ধেকের বেশি বিকাশের, যা সংখ্যায় পাঁচ কোটির বেশি। বিকাশের একারই দৈনিক লেনদেন গড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০ কোটি টাকা তোলা হচ্ছে এটিএম থেকে। তবে এটা বাড়ছে।
জানতে চাইলে বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, নিকটবর্তী এটিএম খুঁজে নিতে বিকাশ অ্যাপে বাড়তি সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হিসাবে রকেটে মাসে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন হয় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এটিএম থেকে তোলা হয় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এখন রকেটের গ্রাহক ২ কোটি ৪০ লাখ।
ওকের গ্রাহক ৫ লাখ, সক্রিয় আছে আড়াই লাখ। এর মধ্যে বড় অংশই শ্রমিক। ওকে দিয়ে কম খরচে যেকোনো ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করা যায়। পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবার মাশুল দেওয়া যায়। ওকে গ্রাহকেরা প্রতি মাসে ৪০ কোটি টাকা লেনদেন করেন।
ইউসিবি আগে ইউক্যাশ নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালাত। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন নতুনভাবে চালু হওয়া ‘উপায়’ সেবায় ১০ লাখ গ্রাহক ও ৫০ হাজারের বেশি এজেন্ট রয়েছে। তাদের এটিএম থেকে টাকা তোলার হিসাব পাওয়া যায়নি।
এসব মোবাইল আর্থিক সেবার খরচ নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কথা হয় রিকশাচালক মুজিবর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা জমলেই বাড়িতে পাঠাই। হাজারে ২০ টাকা খরচ করে বউ টাকা তোলে।’
মুজিবর রহমান জানান, তাঁদের এলাকায় এটিএম কার্ডের সুবিধাও নেই, এটিএম যন্ত্রও নেই। সবাইকে কম খরচে টাকা তোলার সুযোগ পৌঁছে দিতে এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। সে জন্য মুজিবরের মতো রিকশাচালকসহ সবাইকে জানাতে হবে যে বিকাশ, রকেট, ওকে ও উপায়ের টাকা তুলতে কোনো এটিএম কার্ড কিংবা নিবন্ধন লাগে না। যেখানে এটিএম বুথ আছে সেখানে নিজের মোবাইল ফোনটি নিয়ে গেলেই কাজ হয়ে যাবে।
কোন সেবায় কোন এটিএম
বিকাশ: ব্র্যাক, বেসিক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, আইএফআইসি, যমুনা, মিডল্যান্ড, শাহ্জালাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সব এটিএম।
রকেট: ডাচ্-বাংলার সব এটিএম ও শাখা।
ওকে: ওয়ান ব্যাংকের সব এটিএম ও শাখা।
উপায়: ইউসিবির সব এটিএম।
Discussion about this post