ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওরিয়ন খুলনা পাওয়ার লিমিটেডকে (ওপিকেএল) প্রাথমিকভাবে ৯৪৬ কোটি টাকা অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। গত ১০ আগস্ট ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৯৪৪তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ ঋণ হবে সিন্ডিকেট অর্থায়ন, যার নেতৃত্বে থাকবে রূপালী ব্যাংক। এজন্য ২২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাব দিয়েছে ব্যাংকটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিন্ডিকেট অর্থায়নের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি
জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পর্ষদের সভায় ওই প্রকল্পে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তা কার্যকর হবে বিদেশী ঋণ অনুমোদন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট অর্থায়নে চুক্তি স্বাক্ষরের পর। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের পক্ষে কোনোভাবেই সামনে এগোনো সম্ভব নয়। কারণ আমাদের ঋণসীমা বেঁধে দেয়া আছে। নতুন ঋণ দেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।’
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেশীয় অর্থায়নের জন্য ওরিয়ন গ্রুপ রূপালী ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ আগস্ট ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৯৪৪তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওপিকেএলকে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হবে। ঋণটি হবে একটি সিন্ডিকেট অর্থায়ন, যার নেতৃত্বে থাকবে রূপালী ব্যাংক। ৬৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক স্বতন্ত্র বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের জন্য এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পটির নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুরো প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ঋণ ও ২০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ওরিয়ন গ্রুপের। ফলে দেশীয় ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি ও বিদেশী উত্স থেকে ৩ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। এছাড়া ওরিয়ন গ্রুপ অর্থায়ন করবে ১ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
দেশীয় ঋণের মধ্যে ৯৪৬ কোটি টাকা সংগ্রহে পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৬ অক্টোবর ২২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সিন্ডিকেট ঋণে অংশগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায় রূপালী ব্যাংক। এতে বলা হয়, বাগেরহাটের মংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে এ প্রকল্প নির্মাণ করা হবে, যার মেয়াদ হবে ২৫ বছর। তবে ঋণটির মেয়াদ হবে ১৫ বছর। উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে মাস ভিত্তিতে ২৫ বছর বিক্রি করা হবে। এর বাইরে দেশীয় ব্যাংক থেকে ৪১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে প্রকল্পটি তিন বছর অতিক্রম হওয়ার পর বা চার বছর শেষে।
সিন্ডিকেট ঋণের জন্য যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সেগুলো হলো— সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক, সউদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি (সাবিনকো), ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কোম্পানি (আইআইডিএফসি), বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল), সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, বিডিবিএল, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মধুমতি, মিডল্যান্ড, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড ও আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড।
তবে প্রস্তাব পাওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়নি এ সিন্ডিকেট অর্থায়নে। এর মধ্যে আইআইডিএফসি এ প্রস্তাবে অর্থায়ন না করার বিষয়টি জানিয়েও দিয়েছে।
জানা গেছে, ওরিয়ন গ্রুপের কাছে রূপালী ব্যাংকে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। এছাড়া ওরিয়ন ফার্মার ৪০ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনেছে ব্যাংকটি। ফলে ওরিয়ন গ্রুপকে নতুন করে অর্থায়নের সুযোগ নেই তাদের। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ঋণ প্রবৃদ্ধি অতিক্রম করায় সব ধরনের নতুন ঋণ বন্ধ। এ কারণে ওরিয়ন গ্রুপকে অর্থ সংগ্রহ করে দেয়ার প্রক্রিয়ায় নেমেছে ব্যাংকটি।
যোগাযোগ করা হলে প্রস্তাব পাওয়া একাধিক ব্যাংকের এমডি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ওরিয়ন গ্রুপকে অর্থায়ন করে ঝুঁকি নিতে রাজি নই আমরা। এ কারণে পর্ষদও রাজি হচ্ছে না এ সিন্ডিকেটে যুক্ত হতে।’
জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৭ জুন ১ হাজার ৮৮ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তিনটি বিদ্যুেকন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক মাওয়া (মুন্সীগঞ্জ) ৫২২, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ২৮৩ ও খুলনার লবণচরায় ২৮৩ মেগাওয়াটের তিনটি বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ করার কথা। এ বিদ্যুেকন্দ্র তিনটি উৎপাদনে আসার পর ১ হাজার ২৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হওয়ারও পরিকল্পনা আছে। তবে চট্টগ্রামের প্রকল্পটি স্থানান্তর করে ওরিয়ন। ২৮৩ মেগাওয়াটের দুটি প্রকল্প একসঙ্গে করে খুলনায় ৫৬৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুেকন্দ্র করবে তারা। এ প্রকল্পের বর্ধিত হিসেবে ৬৮০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের জন্য অর্থ খুঁজছে ওরিয়ন।
Discussion about this post