কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা কমে হয়েছে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, যা ২০১৯ সালে ছিল ৬ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে নিট মুনাফা ছিল ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ৯ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।
গত বছর করোনার মধ্যেও ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা, খাদ্যপণ্য, নির্মাণসামগ্রীসহ কয়েকটি খাত ভালো ব্যবসা করেছে। বিশেষ করে এসব খাতে যেসব ব্যাংকের ঋণ আছে, তারা নিয়মিত কিস্তি ফেরত পাওয়ায় সুদ বাবদ ভালো আয় করতে সক্ষম হয়েছে বলে ব্যাংকাররা জানান।
গত বছর সুদের হার হঠাৎ কমিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে আমরা সাধারণ আমানতকারীদের সুদের হার সেভাবে কমাইনি। এ কারণে মুনাফা কমে যায়।
শাহ আলম সারওয়ার, এমডি, আইএফআইসি ব্যাংক
তবে ছাড় থাকায় অন্য কয়েকটি খাতের অনেক ঋণের বিপরীতে নিয়মিত সুদ-কিস্তির টাকা ব্যাংকগুলো পায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেননি ঋণগ্রহীতারা। কেবল ৩৬ হাজার ৭১১ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে কিছু কিস্তি পরিশোধ করেন গ্রাহকেরা।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও সরকারি খাত মিলিয়ে ৩২টি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সিটি ব্যাংকের নিট মুনাফা ২০১৯ সালের ২৪৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ৪০১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। গত বছর ব্যাংকটির খরচ যেমন কমেছে, সুদ থেকে নিট আয়ও কমেছে। তবে বিনিয়োগ থেকে আয় বাড়ায় মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে উঠেছে ব্যাংকটি।
জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর আমানতের খরচ কমে আসার পরও আমানত বেড়েছিল ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বেশি খরচের স্থায়ী আমানত কমেছিল ৯৭০ কোটি টাকা। আর ফি ও কমিশন আয়ই ছিল মোট আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ। ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় গত বছর কমেছিল ২৯ কোটি টাকা। সর্বোপরি করপোরেট সুশাসন, সৎ ও দক্ষ পরিচালনা পর্ষদের পেশাদারি সমর্থন ও সিটি ব্যাংকের শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইমেজের কারণে এই নিট মুনাফা করা সম্ভব হয়।
আলোচ্য সময়ে পূবালী ব্যাংকের মুনাফা ২২০ কোটি থেকে বেড়ে ৩৬৭ কোটি, ডাচ্-বাংলার ৪১১ কোটি থেকে ৫২৮ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটির ২০৬ কোটি থেকে ২৭৯ কোটি ও সোনালীর ২৭১ কোটি থেকে বেড়ে ৩২৩ কোটি টাকায় উঠেছে।
আলোচ্য সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, এবি, উত্তরা, এনসিসি, এসআইবিএল, প্রাইম, ইস্টার্ণ, ইউসিবিএল, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা, এক্সিম, শাহ্জালাল, ইসলামী ও অগ্রণী।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১১টি ব্যাংকের নিট মুনাফা কমেছে। মুনাফা কমার শীর্ষে ছিল আইএফআইসি ব্যাংক। ব্যাংকটির নিট মুনাফা কমেছে ১৮৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালে এটির নিট মুনাফা হয় ৫৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্র্যাক, ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংকেরও নিট মুনাফা কমেছে গত বছর।
আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ আলম সারওয়ার বলেন, ‘গত বছর সুদের হার হঠাৎ কমিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে আমরা সাধারণ আমানতকারীদের সুদের হার সেভাবে কমাইনি। এ কারণে মুনাফা কমে যায়।’
মুনাফা কমার তালিকায় থাকা অন্য ব্যাংকগুলো হচ্ছে সাউথইস্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, রূপালী, ওয়ান, ট্রাস্ট, স্ট্যান্ডার্ড ও প্রিমিয়ার ব্যাংক।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডি এম রিয়াজুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ৯ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করে দেওয়ায় আয় কমে যায়। এ ছাড়া করোনার কারণে ব্যবসাও ভালো ছিল না। তাই মুনাফা কমে গেছে। এরপরও ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। তবে চলতি বছর ব্যবসা ভালো হচ্ছে, মুনাফাও ভালো হবে।
এদিকে সম্প্রতি মেয়াদি আমানতের সুদহার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোর সুদ ব্যয় বাড়তে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া সুদে ব্যাংকগুলো আমানত রাখছে ও ঋণ দিচ্ছে, যেটাকে ব্যাংকাররা ‘হুকুমের সুদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
Discussion about this post