মাত্র ৪ কোটি টাকা জামানতের বিপরীতে ১৪০ কোটি টাকার ঋণসীমা মঞ্জুর করেছে নতুন অনুমোদন পাওয়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা। সুবিধাটি দেয়া হয়েছে আহসান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজকে, যার কর্ণধার মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক শহিদুল আহসান। ব্যক্তি পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে এনআরবি কমার্শিয়াল ঝুঁকিপূর্ণ এ অর্থায়ন করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, একই গ্রুপের কাছে সোস্যাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংকেরও ৩০১ কোটি টাকার পাওনা রয়েছে। এসব ঋণের ক্ষেত্রেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। নিয়ম ভেঙে দেয়া এসব ঋণ আদায় ও দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যাংক তিনটিকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক শহিদুল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমার গ্রুপের ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইনি আচরণ করছে না। এমন আচরণ করলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে কিছু থাকবে না। ব্যাংক নগদ টাকা তো খুবই কম দিয়েছে, বেশির ভাগই ঋণপত্র খোলা হয়েছে। পারস্পরিক জোগসাজশ হলে নগদ অর্থ নিতাম, ঋণপত্র খুলতাম না।’
যোগাযোগ করা হলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানা গেছে, শহিদুল আহসানের বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে ৬৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগনামা গত ১০ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন পরিচালনা করে। এনসিসি, স্ট্যান্ডার্ড, শাহজালাল, সোস্যাল ইসলামী, এক্সিম ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে আহসান গ্রুপের ঋণ থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন পরিচালনা করে শুধু সোস্যাল ইসলামী, এক্সিম ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে পরিচালিত পরিদর্শনে উঠে আসে, ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা আহসান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের অনকূলে ১৪০ কোটি টাকা ঋণসীমা মঞ্জুর করে। অথচ ঋণ অনুমোদনের আগে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা, উৎপাদিত পণ্য, পণ্যের মজুদ, বিপণনব্যবস্থা বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়নি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতার তুলনায় বেশি ঋণসীমা মঞ্জুর করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা জামানত নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঋণসীমা মঞ্জুর করা হয়েছে। পোলট্রি ও হ্যাচারি খাতের ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ খাতে নেয়া ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ অন্য খাতে স্থানান্তর হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে, যা ঋণ আদায়কে অনিশ্চিত করে তুলবে। আর এর দায় বর্তাবে শাখা ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে ক্রেডিট কমিটি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমনকি পরিচালনা পর্ষদের ওপরও।
অনুমোদিত ঋণের মধ্যে ৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের অনকূলে এরই মধ্যে বিতরণ করেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। এর মধ্যে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ৩১ মার্চ পর্যন্ত গ্রুপটির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা ছিল ৩০১ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখা বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের অনুমোদন পাওয়ার আগেই পরিচালনা পর্ষদ এজি এগ্রোর ঋণপত্র খোলার অনুমোদন দেয়। ফলে ব্যাংকটি যমুনা ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খোলে, ওই ব্যাংকের পর্ষদে যা অনুমোদিত হয়।
এর বাইরে একই গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের করপোরেট শাখার পাওনা ১৯১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে জামানত হিসাবে ২৬ কোটি টাকার জমি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার মর্টগেজ হিসেবে রয়েছে। অর্থাৎ ৩১ কোটি টাকা দিয়ে ঋণের মাত্র ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ঋণ আচ্ছাদিত করা যায়। একইভাবে গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস ট্রেডার্সের অনকূলে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখায় ১২ কোটি টাকার ঋণসীমা মঞ্জুর করা হয়েছে। এজি প্রোপার্টিজের ঋণের ৫৫ কোটি টাকা ২০ দিনের মধ্যে ছাড় করা হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতেও পর্যাপ্ত জামানত নেই।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হায়দার আলী মিয়া বলেন, ‘আমরা ঋণ প্রদানে কোনো অনিয়ম করিনি। তবে অনুমোদন হওয়ার আগেই ঋণ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এর বিধান আছে। এসব ঋণে কোনো সমস্যাও নেই।’
– See more at: http://bonikbarta.com/last-page/2013/11/06/21446#sthash.mUgA9iGo.dpuf
Discussion about this post