আয়োজন পর্যটন মেলার। শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম সেবা প্রদানের প্রলোভনে। এতে আশ্বাস দেয়া হয় গোপনীয়তার সঙ্গে দেশ থেকে অর্থ নেয়ারও। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে এভাবে অর্থ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ নিয়ে দ্বাদশবারের মতো আয়োজন করা হয় পর্যটন মেলার। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে তিন দিনব্যাপী ‘মনিটর ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-২০১৫’ শেষ হয়েছে গতকাল। এ আয়োজনের সহযোগী ছিল আবার বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন সার্ভিস মালয়েশিয়া ‘মাই সেকেন্ড হোম’ সেবার নিবন্ধন করছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা জানান, ৫০ বছরের কম ও বেশি বয়সীদের ব্যয় দুই রকম। ৫০ বছরের কম বয়সীদের মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম সুবিধা পেতে হলে প্রাথমিক পর্যায়ে দেশেই ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যাংকে থাকতে হবে। এর পরই নিবন্ধনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর সেখানে ৬৪ লাখ টাকা জমা করতে হবে। বাংলাদেশের ব্যাংকে রাখা অর্থই সেখানে নিয়ে যাওয়া যাবে। তারাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেবেন এবং তা গোপনও থাকবে। মালয়েশিয়ায় রাখা অর্থের অর্ধেক এক বছর পর ও পরের বছর ৩০ শতাংশ তোলা যাবে।
জানতে চাইলে দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক মিয়া বলেন, ‘চুক্তি হলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের সব ধরনের সেবা আমরা দিয়ে থাকি। দেশ থেকে অর্থ নেয়া, নথিপত্র ঠিক করা সবই করা হয়।’
ম্যাক্সিমাস বিডি ইমিগ্রেশন সার্ভিসের কর্মীরা বলেন, ‘১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে পারলেই মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম সুবিধা পাওয়া যাবে। আমরাই তা নিশ্চিত করে দেব।’
এই প্রলোভনে পড়ে নিবন্ধন করতেও দেখা যায় অনেককে। ম্যাক্সিমাস বিডিতে নিবন্ধন করা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা আছে। এ কারণে নাম নিবন্ধন করলাম। অবৈধ জেনেও অন্য উপায় না থাকার কারণে এখানে আসতে হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে অর্থ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-এর ৫ (১) ধারার (এ) উপধারায় এটা বলা আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করা হয়। চলতি হিসাবের আওতায় আমদানি-রফতানি, বিদেশে পড়াশোনা, চিকিত্সা কার্যক্রমের জন্য টাকা স্থানান্তরের সুযোগ রয়েছে। এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাও ওই প্রতিষ্ঠানের রফতানি প্রত্যাবসন কোটা থেকে। এর বাইরে বিদেশে অর্থ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রচলিত নীতিমালায় নাগরিকত্ব গ্রহণ বা বিদেশে জমি কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য অর্থ স্থানান্তরের কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে ২০১৩ সালের আগস্টে দুবাইয়ে অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ে মেলার আয়োজন করে দামাক প্রপার্টিজ নামে দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট বণিক বার্তায় ‘দুবাইয়ে অ্যাপার্টমেন্ট কেনার অবৈধ প্রলোভন’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ হয়। পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বাংলাদেশীদের বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ে অর্থ প্রেরণে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ অনুযায়ী বিধিনিষেধ রয়েছে। আইন অমান্য করে অবৈধভাবে অর্থ প্রেরণে যোগসাজশকারীদের ভূমিকা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। গণমাধ্যমে এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রকাশে সতর্ক ও সংযত হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
Discussion about this post