জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড। রূপালী ব্যাংকের তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা ১১০ কোটি টাকা। এর পরও ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই চেক, ব্যাংক ড্রাফটসহ বিভিন্ন নিরাপত্তাসামগ্রী ছাপছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশী ১৮টি ব্যাংক, যা দিয়ে প্রতিনিয়ত শতকোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। শুধু ব্যাংক নয়, দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ ছাপিয়ে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে তুলে দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণ নিয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ঋণ পরিশোধে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। এর পরও পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠানটি। এখন নিয়মানুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধান দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব ফিন্যান্স মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকের ঋণ কেন শোধ হয়নি, এটা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। তবে ব্যাংক বলছে, কিছু ডাউনপেমেন্ট দিলে ঋণ পুনঃতফসিল করে দেবে।’
জানা গেছে, জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড ২০০৮ সালের আগস্টে জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে যাত্রা করে। ২০০৯ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের চেক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদসহ বিভিন্ন নিরাপত্তাসামগ্রী ছাপা শুরু করে। ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে মেয়াদি, সিসি হাইপো, ঋণপত্রসহ বিভিন্নভাবে ২৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ঋণ নেয় তারা। এ সময় প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ছিল ১০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বেসরকারি খাতে গড়ে ওঠা প্রেসের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক এটি। অত্যাধুনিক যন্ত্র নিয়েই গড়ে উঠেছে প্রেসটি। এ কারণে যাত্রার পরই ভালো গ্রাহক পেয়ে যায়। ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়, সেলফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের গ্রাহক পায় তারা। তবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এ ব্যবসার অর্থ দিয়ে ঋণ শোধ না করে অন্যত্র স্থানান্তর করে গড়ে তোলেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। ফলে ব্যাংকে খেলাপি হয়ে পড়ে জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং লিমিটেড। বর্তমানে রূপালী ব্যাংকে তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, প্রিন্টিং ব্যবসার বাইরে প্রধান বিউটি কেয়ার, জেবি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল, জেবি এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, জেনি ফিশিং নেট, জেবি ট্রেডিং করপোরেশন, জেবি সিকিউরিটি সার্ভিস, জেবি টোনার ম্যানুফ্যাকচারিং, জেবি ইনটায়ারমেন্ট, জেবি আইটি সলিউশন ও অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট নামে একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের চেয়ারম্যান।
রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি শুরুর দিকে অনেক ভালো ছিল। ব্যাংকের ঋণও নিয়মিত ছিল। তবে অভিজ্ঞতা ছাড়া ব্যবসা বাড়তে থাকায় আর সামলে উঠতে পারেনি। ব্যাংকের ঋণ শোধ না করে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এর কর্ণধার। ফলে ব্যাংকে খেলাপি হয়ে পড়েছেন। যদিও সবসময় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার সুবাদে আগে খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন তিনি।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানটি চেক ছাপে, এজন্য খেলাপি প্রতিষ্ঠানটিকে রূপালী ব্যাংকের করুণা দেখানোর কিছু নেই। প্রচলিত নিয়মে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এ প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের চেক ছাপতে কোনো সমস্যা নেই। ব্যাংকগুলো তাদের নিরাপত্তাসামগ্রী কোথায় ছাপবে, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের দেখার বিষয়ও নয়। তবে আমাদের একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ড দেয়া আছে।
জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংকের তালিকায় আছে— সোনালী, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, এক্সিম, ইসলামী, এসআইবিএল, প্রাইম, সিটিএনএ, পূবালী, বিডিবিএল, ব্যাংক এশিয়া, এসসিসি, উত্তরা, শাহজালাল, ব্র্যাক, বাংলাদেশ কমার্স, অগ্রণী ও দ্য সিটি ব্যাংক।
সনদ প্রদানকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে— নর্থ সাউথ, আইসিএমএবি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, স্টেট, ইস্টার্ন, ইউল্যাব, অতীশ দীপঙ্কর, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগং, এআইইউবি, প্রেসিডেন্সি, সিটি, ক্যামব্রিয়ান, প্রাইম, শান্ত মারিয়াম, ট্রিনিটি কলেজ ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স।
এছাড়া করপোরেট খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে— বাটা, গ্রামীণফোন, ইন্টারটেক, মুন্নু, রেনাটা, হাইডেলবার্গ, ইবনে সিনা, সেন্ট্রাল ও গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, কেয়া, ন্যাশনাল টি, এপেক্স স্পিনিং, ফার্স্ট লিজ ফিন্যান্স ও বেক্সিমকো ফার্মা।
Discussion about this post