বাণিজ্যিক খাতে ঋণ দিতেই বেশি আগ্রহী ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চভিত্তিক প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংকঋণের ১৭ শতাংশই যাচ্ছে এ খাতে। যদিও এর ৯ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। এছাড়া আমদানি-রফতানিতে যাচ্ছে ঋণের ৯ ও কৃষিতে ৫ শতাংশ।
মুনাফা বেশি ও কম সময়ে আদায় করা যায় বলেই ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক ঋণদানে বেশি মনোযোগী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, বাণিজ্যিক ঋণে মুনাফা বেশি। ব্যাংকগুলোর নজরও তাই এদিকে বেশি। তাছাড়া এ ঋণ কম সময়ে আদায় করা যায়। নিয়ম মেনে ঋণ দিলে তা আদায় নিয়েও কোনো শঙ্কা থাকে না। তবে নির্দিষ্ট কোনো পণ্যের বিপরীতে এ ঋণ না দেয়াই ভালো।
ট্রেড লাইসেন্সধারীদের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসার জন্য দেয়া ঋণই বাণিজ্যিক ঋণ নামে পরিচিত। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭২ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা গেছে বাণিজ্যিক খাতে। এর প্রায় ৯ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকাই শ্রেণীকৃত হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো চেষ্টা করেও এ অর্থ আদায় করতে পারছে না।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঋণের বড় অংশ বাণিজ্যিক খাতে যাবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে দেখতে হবে, বিলাস পণ্য আমদানিতে যেন কোনো অর্থ না যায়। এটা হলে শিল্পোত্পাদন বাধাগ্রস্ত হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে, যার প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণের ১২ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা গেছে বৃহৎ ও মধ্যম মানের শিল্পের কার্যকরী মূলধন বাবদ। কার্যকরী মূলধন ছাড়া গেছে ৫২ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। পোশাক ও টেক্সটাইলশিল্পে গেছে ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৪২ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। ৯ শতাংশ বা ৪০ হাজার ৩২২ কোটি টাকা গেছে আস্থার বিপরীতে ঋণ বা এলটিআরে। কৃষি খাতে গেছে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে গেছে ৪ হাজার ৪০১ কোটি টাকা বা ১ শতাংশ। এ শিল্পের কার্যকরী মূলধনে গেছে ৯ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ। রফতানি ঋণে গেছে ৩ শতাংশ বা ১৪ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আমদানিতে গেছে ৬ শতাংশ বা ২৬ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। জাহাজ নির্মাণ ও ভাঙা শিল্পে ঋণ দেয়া হয়েছে ১ শতাংশ বা ৫ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া আবাসনে ২০ হাজার ৪৮৮ কোটি ও অন্যান্য নির্মাণে ৩ শতাংশ বা ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে গেছে ২ শতাংশ অর্থ, যার পরিমাণ ৮ হাজার ১১০ কোটি টাকা। ভোক্তা ঋণে গেছে ৩ শতাংশ বা ১৩ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। অন্যান্য ঋণ বাবদ গেছে ৪১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, মোট ঋণের যা ৯ শতাংশ।
প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু বলেন, বাণিজ্যিক খাতে ভোগ্যপণ্যে খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভোগপণ্যের ঋণ আদায়ে বিশেষ তদারক কমিটি করা হয়েছে। ভোগপণ্যের বেশির ভাগ ঋণই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের। সেখানে নতুন ঋণ প্রদান ও আদায়ে সব ব্যাংকই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
Discussion about this post