মোবিক্যাশের প্রায় ৬০ হাজার এজেন্টকে পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলা এবং তা পরিচালনার জন্য সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব এজেন্টের মাধ্যমে সেবা দেয়ার জন্য ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে গ্রামীণফোনের। এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিতে সবক’টি ব্যাংকেই এসব এজেন্টের হিসাব থাকতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
এজেন্টদের মাধ্যমে সেবা দিতে গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকগুলো হলো— ডাচ্-বাংলা, মার্কেন্টাইল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ওয়ান, আইএফআইসি ও ইউসিবিএল।
জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স সৈয়দ তালাত কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পেয়েছি এবং চিঠির কিছু বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি আছে ও বর্তমানে ৬০ হাজারের বেশি মোবিক্যাশ এজেন্ট সারা দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত সেবা প্রদান করছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ থেকে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে লেনদেন স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে এবং ব্যাংকগুলোর হিসাবায়ন সহজীকরণের লক্ষ্যে আপনাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিটি ব্যাংকের জন্য এজেন্টদের পৃথক হিসাব খোলা ও পরিচালনা করতে হবে। বিষয়টি ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাদের অনুরোধ জানানো হলো।
প্রান্তিক জনগণের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়। তবে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন হয় একই বছরের ২০ ডিসেম্বর; যা মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব ব্যাংককে মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা অমান্য করলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানানো হয়। এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পষ্ট নির্দেশনা— এ সেবা অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে হবে। সেলফোন অপারেটররা শুধু প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।
এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসিএমপিএস/পিএসডি/৫৭/২০১০-৪৯৫ পত্রের মাধ্যমে গ্রামীণফোনকে মোবিক্যাশের মাধ্যমে তিন ধরনের সেবার অনুমোদন দেয়। এগুলো হলো— ট্রেন ও ক্রিকেট টিকিট ক্রয় এবং পরিষেবা বিল পরিশোধ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া অনুমোদনপত্রে তাদের মোবিক্যাশ ব্র্যান্ডের অধীন নতুন সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে বলা হয়।
তবে গ্রামীণফোন অনুমোদনপত্রের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে মোবিক্যাশের মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা, ওয়ান, মার্কেন্টাইল, ইউসিবিএল, আইএফআইসি ও ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়ার জন্য চুক্তি করেছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণফোন তাদের ব্র্যান্ড মোবিক্যাশের প্রায় ৬০ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে এ সেবা দিচ্ছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি এজেন্টকে ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করার এবং ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। ব্যাংকগুলো শুধু গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ২০ জুলাই বণিক বার্তায় ‘অনুমোদনহীন ব্যাংকিং সেবায় মোবিক্যাশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে গ্রামীণফোনের সঙ্গে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণফোন মোবিক্যাশের বিজ্ঞাপন সংশোধন করবে ও অনুমোদিত সেবার মধ্যে সীমিত থাকবে। মোবিক্যাশের পরবর্তী কোনো সেবা ও প্রচারণার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লিখিত অনুমোদন নেবে। নীতিমালা অনুযায়ী, মোবিক্যাশের সব এজেন্টের সঙ্গে ব্যাংকের পৃথক চুক্তি থাকবে। এ সভার পর থেকেই গ্রামীণফোন মোবিক্যাশের সব ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি এজেন্টগুলোও ধীরে ধীরে ব্যাংকের সেবা প্রদান বন্ধ করে দেয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মোবিক্যাশ এজেন্টের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে হলে এজেন্টকে পৃথক হিসাব খোলার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, এর আগে গ্রামীণফোন মোবিটাকা ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে সেবা চালুর অনুমোদন চায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের টাকার পরিবর্তে অন্য নামে সেবা চালু করে তিন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়। গ্রামীণফোন মোবিক্যাশ নামে সেবা চালু করে তিন ধরনের সেবার অনুমোদন নিয়ে নিজেরাই হিসাব খুলে ব্যাংকিং সেবা প্রদান শুরু করে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এছাড়া সেলফোন অপারেটর রবি ‘অর্থসেবা’ নামে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এছাড়া এয়ারটেল ‘এয়ারটেল মানি’র অনুমোদন চাইলেও তা অনুমোদন পায়নি।
Discussion about this post