ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত গ্রাহকদের সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে নতুন কিছু ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয় মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে। তবে অনুমোদন পাওয়া এ ব্যাংকগুলো হাঁটছে উল্টো পথে। নতুন গ্রাহক সৃষ্টির মাধ্যমে আমানত সংগ্রহের বদলে সরকারি তহবিলের অংশবিশেষ আমানত হিসেবে পেতে ব্যাংকগুলো কার্যত এখন তদবির চালাচ্ছে। মূলত সরকারি আমানতের ওপর ভর করেই ব্যাংকগুলো বড় হওয়ার সুযোগ খুঁজছে।
নিয়মানুযায়ী, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অলস অর্থ ও সঞ্চয়ের ৭৫ শতাংশ কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকে রাখতে হয়। বাকি ২৫ শতাংশ তহবিল বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখা যেতে পারে। নতুন অনুমোদন পাওয়া নয়টি বেসরকারি ব্যাংক এ তহবিলই আমানত হিসেবে পেতে তত্পরতা চালাচ্ছে।
গত এক মাসে নতুন এ ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, তিতাস গ্যাস, পেট্রোবাংলা, চট্টগ্রাম বন্দর, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, ওয়াসা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সিভিল এভিয়েশনসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তহবিল আমানত হিসেবে সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করেছে। নতুন ব্যাংকগুলো সরকারি আমানত পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে— অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ প্রজ্ঞাপনই নথি হিসেবে সরকারি ওইসব প্রতিষ্ঠানে উপস্থাপন করছে ব্যাংকগুলো।
গত ২২ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে নতুন ব্যাংকগুলোয় তারল্য জোগানে সরকারি আমানত রাখার সুযোগ করে দেয়া হয়। আগে নতুন ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর পাঁচ বছর পর সরকারি আমানত গ্রহণের সুযোগ পেত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সরকার থেকে পাওয়া তহবিলের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখতে পারবে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে।
এ প্রসঙ্গে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সরকারি কিছু আমানত পেয়েছি।’ অন্যদিকে ফার্মার্স ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোশতাক আহমেদ বলেন, সরকারি আমানত পাওয়ার চেষ্টা চলছে, বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।
জানা গেছে, সম্প্রতি ইউনিয়ন ব্যাংক এক বছর মেয়াদি মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট পাওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। একই কায়দার আবেদন করে আমানত পেয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক। পাশাপাশি মেঘনা ব্যাংকেরও সরকারি আমানত সংগ্রহের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে আমানত চেয়ে আবেদন করলেও তা এখনো পাইনি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে শুনেছি।’ তবে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘সরকারি আমানত নেয়ার সুযোগ তৈরি হলেও ঋণ চাহিদা এখনো সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া দেশের যে অবস্থা, তাতে আমানত নিয়ে কী করব। বিনিয়োগের পরিবেশই তো তৈরি হচ্ছে না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত হিসাবে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আমানত ও ঋণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪৬০ ও ২৮৭ কোটি টাকা। এসবিএসির ৩০৭ ও ২১০ কোটি, মেঘনার ২৩৯ ও ১০৯ কোটি, মিডল্যান্ডের ২৭৩ ও ১৩৫ কোটি, ফার্মার্সের ১৫২ ও ১১ কোটি, ইউনিয়নের ৪৬৩ ও ৫৬৮ কোটি, এনআরবির ১৪৮ ও ৭ কোটি ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ২৫ ও ৯১ কোটি টাকা। এছাড়া মধুমতি ব্যাংকের আমানত মাত্র ১২ লাখ।
নতুন ব্যাংকগুলোর পরিচালন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতি মন্দা। পুরনো ব্যাংকগুলোই অলস অর্থ নিয়ে বিপাকে আছে। আমরা জনগণের কাছ থেকে আমানত নিলে বেশি হারে সুদ দিতে হবে। তাই সরকারি আমানতের দিকেই নজর বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা শিথিল করায় তার সদ্ব্যবহার করছে ব্যাংকগুলো।’
– See more at: http://bonikbarta.com/first-page/2013/12/18/26064#sthash.HT9Tc2ue.dpuf
Discussion about this post