সঞ্চিতি সংরক্ষণে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে পাঁচটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও বেসিক। বেসরকারি ছয় ব্যাংক হলো আইএফআইসি, এবি, ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, ন্যাশনাল ও পদ্মা ব্যাংক।
ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার কারণে ঋণ আদায় হয়নি। এর ওপর ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সুদের হার ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মুনাফা কমবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদ এই বাস্তবতা মানতে চাননি। তাই তাঁরা তদবির করে বিশেষ সুবিধা নিয়ে হলেও মুনাফা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন।
এবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা হলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান।
আইএফআইসি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩৭৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটি চলতি ২০২১ সালে ২০ শতাংশ, ২০২২ সালে ৩০ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ৫০ শতাংশ সঞ্চিতি সংরক্ষণের সুযোগ পেয়েছে। এই ব্যাংক ২০২০ সালে ৫৬ কোটি ও ২০১৯ সালে ২৪৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ব্যাংকটিতে ৩২ শতাংশ শেয়ার সরকারের। তবে নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে।
গত বছর ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি হয়। ব্যাংকটি চলতি বছরে ১০০ কোটি ও আগামী বছরে ১০০ কোটি টাকা বাড়তি সঞ্চিতি রাখার সুযোগ পেয়েছে। এই ব্যাংকের মালিক এস আলম গ্রুপ। এর চেয়ারম্যান সাইফুল আলম (এস আলম) নিজেই। একই গ্রুপের মালিকানাধীন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ৭৩ কোটি টাকা, যা চলতি বছরে সংরক্ষণ করবে ব্যাংকটি।
এবি, আইএফআইসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও সোশ্যাল ইসলামী—এই চার ব্যাংকই গত বছরে শেয়ারধারীদের ৫ শতাংশ স্টক মুনাফা দেয়।
সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ২০২৪ সাল পর্যন্ত সমহারে তা সংরক্ষণের সুযোগ পেয়েছে। আর পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। সেটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ পেয়েছে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালীর ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ও অগ্রণীর ২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি। এই ঘাটতি সংরক্ষণে ব্যাংক দুটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় পেয়েছে। আর জনতা ব্যাংকের একার ঘাটতিই ১১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা, যা সংরক্ষণে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ১০ কোটি টাকা ও বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা ঘাটতি, যা সংরক্ষণে ব্যাংক দুটিকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবশ্য বলেন, প্রকৃত আর্থিক চিত্র ধরলে ও সে অনুযায়ী প্রভিশনিং করলে বেশির ভাগ ব্যাংক লোকসানে চলে যাবে, যা দেশের অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারে খারাপ বার্তা দেবে। এ জন্য জেনেশুনেই প্রকৃত আর্থিক চিত্র গোপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post