বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৯৮২ কোটি টাকা। এ অর্থ পরিশোধে গ্রুপটিকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এজন্য দুই বছর পর থেকে কিস্তি পরিশোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৩ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নেয়া এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মতামত আকারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নজিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কাছে গ্রুপটির ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে মতামত চেয়েছিল। আমরা তা পর্ষদে অনুমোদন করে দিয়েছি। বড় এ গ্রুপটিকে সুযোগ দিলে তারা টিকে থাকবে। অর্থপ্রবাহ ঠিক রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখতেই এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিলেই তা কার্যকর হবে।’
জানা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের জন্য গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যতিক্রমী একটি প্রস্তাব দেন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। সঙ্গে দেয়া হয় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এসএফ আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি করে দেয়া ঋণ পুনর্গঠনের বিস্তারিত প্রস্তাবও। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপের প্রস্তাব পেয়ে গত ১৯ আগস্ট এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাত ব্যাংকের মতামত চেয়ে চিঠি দেয়। ব্যাংকগুলো হলো— সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, ন্যাশনাল, এক্সিম ও এবি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংকের পর্ষদের তিনটির বেশি সভায় এ বিশেষ সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। অবশেষে ৩ নভেম্বর বিশেষ সুযোগ দেয়ার বিষয়ে একমত হয় পর্ষদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো সোনালী ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ তিনবারের অধিক পুনঃতফসিল হওয়ায় নতুন করে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। তবে কোম্পানিটির সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিসাপেক্ষে এবং কোম্পানির অর্থপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে বৃহদায়ক ঋণ বিশ্রেণীকরণ করে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার জন্য পুনঃতফসিল করা যেতে পারে। এজন্য গ্রুপের স্বল্পমেয়াদি ফান্ডেড ৩৪১ কোটি ও দীর্ঘমেয়াদি ফান্ডেড ৬৪১ কোটি অর্থাৎ ৯৮২ কোটি টাকা দুই বছর গ্রেস পিরিয়ড বিবেচনা করে পুনঃতফসিল করা যেতে পারে। এজন্য সুদের হার হবে ১০ শতাংশ। তবে দুটি কিস্তি খেলাপি হলে এ সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে। গ্রুপটির ৩১ আগস্টভিত্তিক সিআইবি রিপোর্টে কোম্পানির ঋণ এসএমএ ও এসএস (নিম্নমান) মানে শ্রেণীকৃত রয়েছে।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল বিভাগের কাছে সোনালী ব্যাংকের ৯৮২ কোটি, রূপালীর ৬৪৬ কোটি, জনতার ১ হাজার ৪ কোটি, বিডিবিএলের ১০ কোটি, সিটি ব্যাংকের ২ কোটি, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ১২ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১২৮ কোটি, এবি ব্যাংকের ৩৭ কোটি, ফার্স্ট লিজ ফিন্যান্সের ২৬ কোটি, ফিনিক্স ফিন্যান্সের ৪ কোটি টাকা ঋণ বকেয়া রয়েছে।
গ্রুপের করপোরেট ও অন্যান্য বিভাগের কাছে অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা ৩৪৮ কোটি, এবি ব্যাংকের ৭৬ কোটি, এক্সিম ব্যাংকের ১৯৮ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের ৬ কোটি টাকা। আইসিবি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ডিবেঞ্চার রয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। এছাড়া গার্মেন্ট বিভাগের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস, এসেস ফ্যাশন্স, ক্রিসেন্ট ফ্যাশন্স অ্যান্ড ডিজাইন, বেক্সিমকো ফ্যাশন এবং নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে জনতা ব্যাংকের ১ হাজার ২৪৬ কোটি, আইআইডিএফসির ১৫ কোটি, সিটি ব্যাংকের ২ কোটি ও এবি ব্যাংকের ৪৩৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট বিভাগের ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করেছেন গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের মতো অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের প্রস্তাবে একমত হলেই তা কার্যকর হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং গ্রুপটির সম্মিলিত সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে।
Discussion about this post